অনুগল্প: ক্লাসমেট


গল্প: ক্লাসমেট
লেখা: এস.এ. সাগর, আরমান আলিফ, শাহরিয়ার ইমরান ইমু।

এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে উঠলাম। হঠাৎ করে ঈদের ছুটিতে  গ্রামের বাড়িতে যেতে হয়। তো অনেকদিন পর গ্রামের  বাড়িতে গিয়ে মনের মধ্যে একটা শিহরণ জাগছিল। তো পাশের বাড়ির এক ছোট ভাইকে নিয়ে পুরোনো স্কুলটা ঘুরতে গিয়েছিলাম। ঈদের ছুটি থাকায় স্কুলের আশেপাশে তেমন লোকের আগমন নেই। পুরোনো স্কুলটাকে দেখে অনেক হারানো সৃতি মনে পড়ে যাচ্ছিল। তা যাইহোক স্কুলের পাশে ছিল একটা বিশাল পুকুর, সময়ের ব্যবধানে অনেকটা শুকিয়ে গেলেও, এখনকার আট দশটা নদীর থেকে চওড়া হবে। তো আমি আর পাশের বাসার ছোট ভাই বাইক নিয়ে ঘুরতে এসেছি। পুকুরের পাড় ধরে হাটছি। হঠাৎ এক মায়াবতী রমনীর আগমন , অপূর্ব সুন্দর দেখতে। মুখের কোনায় একটা ছোট তিল হাসছে, একদম ঠিক জায়গায়। দেখলে যেন চোখ সরানো কঠিন। এরকম মেয়ে খুব কমই দেখা যায়। তো আমার চেয়ে দেখা দেখে ছোট ভাই বল্লো ভাইয়া এই গ্রামেই বাড়ি। আমি ওর কথা শুনে একটু লজ্জা পেলেও ওর মাথায় একটা গাট্টা মেরে বল্লাম বেশ পাকা হইছচ তো, কেবল তো টেনে উঠছস। ও আমাকে তাচ্ছিল্যের সুরে বল্লো তাতে কি ভাইয়া "ডিজিটাল বাংলাদেশ"।  বেচারা অবশ্য ঠিকি বলছে,  এখনকার ছেলেমেয়ের যা অবস্থা সেই অনুপাতে ওকে একটু কমই বলা চলে। তো কথার ফাকে দেখলাম মেয়েটাও আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে,  সাথে সম্ভবত তার ছোট বোন বা এইরকম কিছু হবে। আমার হার্ট বিট যেন ৩ গুণ হইয়া গেল, মুখটাও লাল হয়ে গেছে। তো এইবার ছোট ভাইকে বল্লেই ফেললাম, "বাড়ি কোন দিকে রে?"।  ছোটভাই বল্লো তারা নাকি এখন এইখানে থাকে না, আগে থাকতো। মাঝে মাঝে ঘুরতে আসে। আমি এইবার বল্লেই ফেল্লাম "যাতো একটো এইদিকে আসতে বল।" ও হাসিমুখো গেল,  কিন্তু ২ মিনিট হয়ে যায় তাও এদিকে আসার নাম নাই। শেষ পর্যন্ত পরাজয়ের কালো মেঘে মুখ রাঙিয়ে এসে বল্লো, আপুটাকে আসতে বলছিলাম আসল না। বল্লো যে কথা বলতে চায় তাকে দেখা করতে বলো।  আমি তো হেভি সেন্টি খেলাম, কিছুক্ষণ ঠায় দাড়িয়ে রইলাম। তারপর দেখি মেয়ে তার বোনকে নিয়ে একদিকে রওনা হলো।  এবার আমরাও চুপিচুপি পিছু নিলাম। মেয়ে হাটা থামালেই আমরা পিছন থেকে হাওয়া হইয়া যাই। তো গ্রামের পথ হলেও গাছ-গাছড়া কম,  লোকানোর জায়গা নাই। মেয়ে মনে হয় এইবার বুঝতে পারছে যে,  আমরা ফলো করতেছি। সে এবার আর সুযোগ না দিয়ে সোজা পিছনে তাকিয়ে আস্ক করল, "এইযে মিস্টার প্রবলেম কি? পিছু নিছেন কেন? যা বলবেন সোজাসোজি বলতে পারেন না? মনে সাহস নাই?"। আমি তো এইবার হেবি থতমত করতে লাগলাম। সে এবার নিজেই জিঞ্জেস করল, "বাড়ি কই?" আমি তাকে সব বল্লাম যে এখানে আগে থাকতাম, এখন বেড়াতে আসছি। তো আমিও এবার কিছুটা সাহস জুগিয়ে জিঞ্জেস করলাম, "কিসে পড়েন?" সে বল্লো, "এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে উঠল"।  কথাটা শুনে মনে লাড্ডু ফোটল,  বয়সে বড় না তাহলে। বেশ কয়েকদিন গ্রামে আছি কিছু হলেও হতে পারে। এসব ভাবতে ভাবতে সে আমাকে বল্লো যে আমি কিসে পড়ি। তো আমিও সব বল্লাম যে আমিও সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছি। আরও বল্লাম যে এই স্কুলেরই ছাত্র ছিলাম। এবার সে প্রশ্ন করলো যে, কতসালে পড়তাম, সহপাঠীর নাম ধাম এগুলা জিঞ্জেস করল। আমি তার কণ্ঠে শুনে শুধু মুগ্ধ হচ্ছিলাম, তাই উত্তর না দিয়ে পাড়লাম না। এবার সে কি ভেবে তার সাথে থাকা মেয়েটাকে বাড়ি চলে যেতে বললো। সে এবার কি মনে করে বল্লো, "শ্রাবন্তী নামে কওকে চিনি কিনা?"। আমি তখন অতীতের খাতা আওরাছিল্লাম। মনে মনে ভাবলাম, হ্যা এক শ্রাবন্তীকে তো চিনতাম। কিন্তু সেটা অনেক পুরনো কথা,  আমরা ক্লাস ১ থেকে ৬ পর্যন্ত পেড়ছি এক ক্লাসে। মেয়েটা হিন্দু ছিল। সবসময় দৌড় প্রতিযোগিতায় ফার্স্ট হতো। একবার চুরি করা আমের ভাল নিয়ে ঝগড়ার সময় আমার থুতনিতে একবার কাটা কম্পাস দিয়া ঘা করে দিছিল, এখনও দাগ আছে। ক্লাস ৬ থাকলে তাকে  মজা করে প্রপোস করেছিলাম। আর ভালো বন্ধু হওয়ায় সেও হেসে উরিয়ে দেয়। যদিও তখন প্রপোস ট্রপোস এগুলা কিছু ভালমতো বুঝতাম না।তার বাবার বলদি হওয়ায় গাজীপুর চলে যায়। তারপর থেকে আর যোগাযোগ নেই। তবে এখনকার পুকুর পাড়ের এই রহস্যময়ীকে এসব কথা বল্লাম না শুধু জিঞ্জেস করলাম, "শ্রাবন্তী নাম দিয়ে আপনি কি করবেন?" সে বল্লো "কিছু না, এমনিতেই?" কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলতে আরম্ভ করলো, "আর কিছু বলার আছে?" আমি  বল্লাম, "না থাক, আশা করি আবার দেখা হবে, তবে নাম্বারটা পাওয়া গেলে ভাল হতো। "
তারপর সে এক্টা মায়ারি হাসি দিয়ে বল্লো নাম্বার দেওয়া যাবে না। কিন্তু আমি আমার নাম্বাটা ঠিকই দিয়ে এলাম, অদ্ভুত বিষয়টা হলো আমার নম্বর নিতে তার কোন আপত্তি নাই। মনে মধ্যে এখন ২ নম্বর লাড্ডুটাও ফুটলো। কুচ কুচ হোতা হ্যায়। ভাবলাম আজকের জন্য বুধোয় ডোজ বেশি হয়ে যাবে তাই তাকে বিদায় জানিয়ে পথ চলা শুরু করলাম  । সে পথ চলা শুরু করল। আমিও তখন প্রায় বাইকে উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তারপর য়া ঘটল তার জন্য একদম প্রস্তুত ছিলাম না। হঠাৎ করে আমার সেই মায়াবতী রমনী রহস্যভরা কণ্ঠে বলে উঠল,
" দোস্ত, ঢাকা যাইয়া তো ভালই লুচাম্মি শিখছস। তয় প্রথম দিনই কোন মেয়ার কাছ থিকা ফোন নম্বর চাইস না, নাইলে মাইর খাবি।"
ছোট ভাইয়ের সামনে সেইদিন যে লজ্জা পাইছিলাম, এমন লজ্জা সারা জিবনে পাই নাই। আমি ভাবতে লাগলাম, কোন অধিকারের বলে সে আমাকে এমন কথা বললো। যতই ভাবি ততোই সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। ছোট ভাইকে কোন মতে যাইতে বলে মেয়ের সামনে গিয়ে দাড়ালাম, মেয়ে তখনও হাসছে। আমি কিছু বুঝতে পারছিলাম না আর ওনি আরও জোরে জোরে হাসছিল। হঠাৎ করে তার বা হাতের দিকে চোখ গেল, হাতে  তালুর ঠিক উপরে  সেই কালো দাগ। হ্যা, সেই কালো দাগ, মুখের বামপাশে তিল। 
"শ্রাবন্তী "। এইবার শ্রাবন্তী বইলা মৃদ্যু চিৎকার দিয়া উঠলাম। সে বল্লো, "গবেঠ,  চিনছস তাইলে?" এবার আমার কাছে সবটা ক্লেয়ার হইল, আমার লজ্জার পরিমাণ কিছুটা কমাইতেই ও ওর বোনকে আগেই চলে যেতে বলেছিল। ওকে বল্লাম, "দোস্ত,  তুই আমারে এতদিন পরেও মনে রাখছস? চিনলি কেমনে?" বল্লো, "মামা, তোর মুখের দাগটা এখনও রয়ে গেছে" এবার আমিও সবটা ভেবে কিছুক্ষণ হাসলাম। ও আরও বললো ও এইখান থেকে যাওয়ার পরও নাকি আমাদের বন্ধু-বান্ধবদের খবর নিতো।এই কয় বছরে ওদের কোন খবর না নেওয়ার লজ্জাটা আরও বেড়ে গেল। ও আরও খবর দিল, দুইমাস হইছে বিয়ে হইছে ওর, জামাই নাকি একটা কোম্পানিতে চাকরি করে।   তা যাইহোক,  ও এবার ওদের বাড়িতে যেতে পিড়াপিড়ি করল, যদিও শেষ পর্যন্ত যে লজ্জা পাইছি তাতে আর যেতে পারলাম না। বল্লাম আরেকদিন যাবনে। আমরা যে টাইপের ফ্রেন্ডস ছিলাম একেবারে আপন রক্তের মতো, সেই ১ম ক্লাস থেকে ক্লাসমেট ছিলাম। অতএব, ওর সাথে যে এতক্ষণ এইসব নিতে কথা বলছিলাম, ভাবলেই এত হাসি পাইতেছিল। ও আমাকে বিদায় দিয়ে চলে গেল। কয়েকদিন পরে ছুটি শেষ হলে
ঢাকা চলে আসি। ও মাঝে কয়েকবার ফোন দিয়া খোজ খবর নিতো, সামনাসামনি আর কখনো দেখা করার সাহস হয়নাই।  এরপর যখনই ওই ঘটনার কথা মনে পড়ে, আর উচ্চস্বরে হেসে উঠি। আসে পাশে কেও কি কারণে হাসছি বল্লে উত্তর দিতে পারি না😂😂।
©ArmanAlif        ©ShariarImranImu

আপনাদের ভালোবাসা আমাকে আরও ভালো লেখার অনুপ্রেরণা জোগায়। Next Update Coming Soon.

Comments

Popular posts from this blog

জেনে নিন ইমুজি ও এর ব্যবহার!! -_-