বাঙালি ও তার ফুটবল: এমনটা তো হতেও পারে?!"
২০৬৪ ফুটবল বিশ্বকাপ বহু পরিসংখ্যান শেষে এবারের বিশ্বকাপের হট ফেবারিট জার্মানি ও আর্জেন্টিনা। তাদের উভয়ের ঝুলিতেই এখন বিশ্বকাপের সংখ্যা ৭টি।
প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ খেলছে বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপের হোস্ট চায়না। এশিয়ান রিজিওনে চায়না এখন অনেক স্ট্রং টিম। নতুন করে বড় দলের খাতায় নাম লিখিয়েছে ইন্ডিয়া আর
বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কারেন্ট র্যাংকিং এখন ২৫, ইন্ডিয়ার ২৩।
দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপ খেলছে ইন্ডিয়া।
এশিয়ান ফুটবল এখন সারাবিশ্বে বেশ জনপ্রিয়। এএফসি (এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন) চ্যাম্পিয়ন্স লীগ এখন হাইভোল্টেজ লীগ। গত সিজনে রানার্সআপ হয়েছে বাংলাদেশের "ফুটবল ক্লাব ঢাকা"। চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জাপানের ক্লাব "টোকিও ভার্ডি"।
সাফে এখন বাংলাদেশ আর ইন্ডিয়া ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কাপ নিচ্ছে। বাংলাদেশের ঝুলিতে এখন ৭ টি সাফ শিরোপা। এস এ গেমসে গোল্ড আছে আটটা। অবশ্য লাস্ট অলিম্পিকে বাংলাদেশ বলার মত তেমন কিছু করতে পারে নি। চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ব্রাজিল।
চাইনিজ লীগ এখন লা লীগার পর বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা লীগ। ইংলিশ লীগ ঐতিহ্য হারিয়েছে প্রায় এক যুগ হল। যদিও রেংকিয়ে ইংল্যান্ড এখন অনেক শক্তিশালী একটি দল। তাদের ঝুলিতে এখন তিন তিনটি বিশ্বকাপ। নিজেদের স্বর্ণযুগ অনেক আগেই কাটিয়ে আসা ব্রাজিলের বিশ্বকাপ সংখ্যা এখন ৬টি। পেলে, রিভালদো, রোনালদো, রোনালদিনহোদের সোনালি সময়গুলো এখন শুধুই অতীত। লাস্ট ৩টি বিশ্বকাপে নিজেদের সেরা স্কোয়াড় নিয়েও তাদের হারতে হয় ইটালি, ইংল্যন্ড আর আর্জেন্টিনার কাছে। লাস্ট ইয়ারে ব্যালন ডিঅর জেতা ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড উইলিয়ান জুনিয়র খেলছেন বেইজিং স্পোর্টস এ। পাশাপাশি ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশের প্রিমিয়ার লীগও এখন বেশ মর্যাদার লীগ এশিয়াতে।
আর্জেন্টিনা টিমে বড় কোন স্টার নেই এখন।
তবে তাদের বেশ কজন উঠতি স্টার আছে। আর্জেন্টাইন লীগ থেকে ১৯ বছর বয়সী ফাবিয়ানকে উড়িয়ে এনেছে ফুটবল ক্লাব ঢাকা। তার গায়ে তুলে দেয়া হয়েছে ১০ নম্বর জার্সি। তাকে এই জেনারেশনের মেসি বলে ডাকা হচ্ছে। তবে ঢাকার খেলায় স্পটলাইট ফাবিয়ানের চেয়ে বেশি থাকে অন্য এক প্লেয়ারের উপর। তার নাম জয়। বাংলাদেশের ছেলে। তার গায়ে ১১ নাম্বার জার্সি। বাংলাদেশ ন্যাশনাল টিমে আলো ছড়াচ্ছেন ২০ বছর বয়সী ৯ নম্বর জার্সি পরা স্ট্রাইকার আরিফ। ৭ নম্বর জার্সি পরা উইংগার রাফি বা পায়ের শটে বিশ্বসেরাদের কাছাকাছি। মিডফিল্ডে সুমন আছেন দলের ভরসা। একাই বল টেনে নিয়ে চোখ ধাঁধানো গোল দিতে পারেন। বাংলাদেশের ডিফেন্স এই মূহুর্তে এশিয়ার সেরা ডিফেন্স। যদিও ডিফেন্ডার মিশু এবং সোহান স্প্যানিশ লীগে খেলছেন। এশিয়ান কম্বিনেশনে এডজাস্ট হতে সময় লাগার কথা। তারপরও তারা কনফিডেন্ট। গোল কিপার আনামুল খেলছেন চাইনিজ লীগে। এশিয়ার অন্যতম সেরা সে। বিশ্বকাপের আগে ১০ নম্বর জার্সি আয়োজন করে তুলে দেয়া হয়েছে জয়ের গায়ে। পরিয়ে দেয়া হয়েছে ক্যাপ্টেন্স ব্যান্ড। ২৮ বছর বয়সী জয় ওয়ান ম্যান আর্মির মত বাংলাদেশকে একা টেনে নিয়ে গেছেন বিশ্বকাপ পর্যন্ত। ২০ থেকে ২৩ বছর পর্যন্ত জয় চাইনিজ লীগে খেলেছেন। তারপর সিভিয়ার ইঞ্জুরিতে পড়ে মাঠের বাইরে ছিলেন এক বছর। ফিরে আসতে আরও এক বছর। সবাই ভেবেছিলেন তিনি হয়তআর কামব্যাক করবেন না। পুরো দেশকে কাঁদিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে মাঠ ছাড়তে হয়েছিলো তাকে।
২৫ বছর বয়সে জয় দলে ফিরলেন। তার ফিরে আসাতেই যেন উজ্জীবিত হল বাংলাদেশ। ২০৬৭ সালে প্রথমবারের মত এএফসি এশিয়ান কাপের ফাইনাল খেললো বাংলাদেশ। ৭ বারের চ্যাম্পিয়ন জাপানকে হারিয়ে এখন তারা
এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন।
পুরো বাংলাদেশে যেন একটাই নাম তারপর থেকে। জয়!
জয়! জয়!
তার ইঞ্জুরির ভাগ্য খুব খারাপ। আবারও ইঞ্জুরিতে পড়লেন। কামব্যাকও করলেন। তবে চাইনিজ লীগে আর ফের হল না। থেকে গেলেন ঢাকায়। ঢাকার হয়ে দুই মৌসুম ৮০ টি গোল
করেছেন। তারপর ওয়ার্ল্ডকাপ কোয়ালিফাইং রাউন্ডে আগুন ঝড়ানো ফুটবল খেলে ২৮ বছর বয়সে প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে এসেছেন বাংলাদেশকে নিয়ে।
২০৬৪ বিশ্বকাপের পর্দা উঠলো। উদ্বোধনি ম্যাচে
মুখোমুখি চায়না আর জার্মানি। ১-০ গোলে জার্মানিকে হারিয়ে দিল চায়না। সবার চোখে মুখে বিস্ময়ের ছাপ। হয়তো নতুন কিছু হতে চলেছে।
বিশ্বকাপের দ্বিতীয় দিন। বি গ্রুপের প্রথম ম্যাচে
বাংলাদেশ স্পেনের মুখোমুখি। স্পেনের টিকিটাকার সাথে বাংলাদেশের ফুটবলের নিউলি ইনট্রোডিউজড দেশি স্টাইল। স্পেনের সাথে ১-১ গোলে ড্র করলো বাংলাদেশ। পরের দুটো ম্যাচে পেরু এবং নাইজেরিয়াকে হারিয়ে দিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ বাংলাদেশ। স্পেন আরও বড় ব্যবধানে জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন।
প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ খেলতে এসেই দ্বিতীয়
রাউন্ডে বাংলাদেশ। পুরো বিশ্ব একবার ভ্রু কুঁচকে
তাকালো এই নামটার দিকে। স্টেডিয়ামে উড়া বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকার দিকেও।
ফুটবলের সবচেয়ে প্রভাবশালী সাইট গোল ডট কম বাংলাদেশ নিয়ে বিশাল বড় ফিচার করলো।
দ্বিতীয় রাউন্ডে বাংলাদেশ ইন্ডিয়াকে হারালো।
কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ইতালি। ১-০ গোলে ইতালিকে হারিয়ে লিটারেলি পুরো বিশ্বকে শকড করে দিলো বাংলাদেশ। একমাত্র গোলটা এলো জয়ের পা থেকে।
এদিকে গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব ট্রেন্ডিং এ নাম্বার ওয়ানে চলে এলো বাংলাদেশের নাম। বাংলাদেশকে নিয়ে স্টাডি
করছে সবাই। বাংলাদেশবাসী দেখছে পাওয়ার অফ ফুটবল। একটা খেলা তাদের দেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ব্যাপারে স্টাডি করতে গিয়ে সব মানুষেরা শুধু অবাক হচ্ছে। হাইলি পপুলেটেড এমন একটা দেশে মানুষ কীভাবে সার্ভাইভ করছে এটা ভেবে তারা যেন শিউরে উঠছে। ওভার ক্রাউডেড সিটি ঢাকা বিশ্বের বসবাসেরঅযোগ্য শহরের একটি অথচ সেই ঢাকা থেকেই উঠেএসেছে জয়ের মত প্লেয়ার।
১৯৭১ এ এই জাতি যুদ্ধ করে নিজেদের দেশ ছিনিয়ে এনেছে। ১৯৫২ সালে নিজের ভাষার জন্য যুদ্ধ করেছে।এশিয়ান ফুটবলে দে ওয়্যার নাথিং। বাট একটা সময় তাদের আবাহনী- মোহামেডানের টান টান উত্তেজনাময় ফুটবল লীগ ছিলো। হাউ ফানি!!!
গোল ডট কম একটা ফিল্ডওয়ার্ক করালো এক রিপোর্টারকে দিয়ে বাংলাদেশে। তারপর একটা প্রতিবেদন ছাপা হল এভাবে,
"মূলত ২০১৮ বিশ্বকাপের সাথে বাংলাদেশের
এংগেজমেন্ট ছিল প্রচুর। ফর্মে থাকা রোনালদো, মেসি, নেইমারদের দেখে সে দেশের ছেলেরা উজ্জীবিত হল নতুন করে। ফুটবল সে দেশে আগে থেকেই খুব জনপ্রিয় খেলা ছিলো। তারপর সেখানে কিছু ফুটবল একাডেমি গড়ে উঠলো। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে ঢেলে
সাজিয়ে কিছু ইউসফুল পারসনকে বসানো হল। দেখতে দেখতে তাদের খেলার স্ট্যান্ডার্ড বেড়ে গেলে। তবে বড় আসরে ঠিকমত ক্লিক করছিলো না সে দলটা। এর মধ্যেই এশিয়াতে ফুটবলের প্রচুর প্রসার ঘটলো। বাংলাদেশের এখন
যে টিমটা আছে সেই টিমটা আসার পর তাদের ফুটবল পুরোপুরি বদলে গেল। স্পেশালি দ্যাট বয়, জয়। ওয়ান ম্যান আর্মির মত দেশের ফুটবলের হাল ধরে আছেন ১০ বছর ধরে।"
একসময় বাংলাদেশের মানুষজন ব্রাজিল আর্জেন্টিনা নিয়ে কতপাগল ছিলো সেসব নিয়ে হাসাহাসি হল পুরো বিশ্বপ্রচুর। জমি বেচে পাঁচ কিলোমিটার লম্বা জার্মানির পতাকা বানানো চাচার সবকিছু আর্কাইভ করা হল।
২০৬৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ব্রাজিলের মুখোমুখি বাংলাদেশ। এর আগের তিন দেখায় কখনো জিততে পারেনি বাংলাদেশ।
৯০ মিনিট গোলশূন্য খেলায়। অতিরিক্ত সময়ের ৭ মিনিটের মাথায় জয়ের বাড়ানো পাস থেকে গোল করলেন রাফি। থেমে গেল ব্রাজিল শিবির।
বাংলাদেশ! বাংলাদেশ! বাংলাদেশ!
স্টেডিয়ামে যেন একটাই শব্দ। চায়না থেকে সে শব্দ যেন ভেসে আসছে কর্ণফুলীর তীরে।
প্রথমবারের মত খেলতে এসেই ফাইনালে উঠে গেল বাংলাদেশ। ফাইনালে খেলবে তাদের দেশের মানুষদের সবচেয়ে প্রিয় দল আর্জেন্টিনার বিপক্ষে।
বেইজিং ন্যাশনাল স্টেডিয়ামের প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ লাল সবুজ রং এ নিজেদের রাঙিয়ে খেলা দেখতে এসেছে। যে বাংলাদেশে একসময় প্রতিটা গাছে আর্জেন্টিনার পতাকা লাগানো থাকতো তারাই আজ প্রতিপক্ষ। বাংলাদেশের মানুষ টেনশনে সারাদিন না খেয়ে আছে। খেলা শুরু হল। বিশ মিনিটের মাথায় মারাত্মক একট্যাকলে মাঠ ছাড়লেন আগের ম্যাচের স্কোরার রাফি। বাংলাদেশ শিবিরে দুশ্চিন্তা। ক্যাপ্টেন জয় সবাইকে হাত ইশারা দিয়ে বোঝালেন, টেনশন নিস না, আমি আছি। প্রথম হাফ গোলশূন্য থাকার পর সেকেন্ড হাফও প্রায়শেষের দিকে। অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিটে এসে মিডফিল্ড থেকে একা বল টেনে নিয়ে গিয়ে গোল করলেন আর্জেন্টিনার পাবলো পেরেজ। সাথে সাথেই হুইসেল বাজলো। খেলা
শেষ।
আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন!!!
আবারো স্বপ্ন ভঙ্গের স্বাদ পোলো ৩৮ কোটি মানুষ। যদিও এই বিশ্বকাপ হতে তেমন কিছু হারাবার ছিল না জয়-রাফিদের। তবুও যেন আজ সারা বিশ্ব ফুটবলপ্রমীদের বুকে দহনের সুর। তাদের চোখে ভেসে উঠল ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ অথবা ২০১৫/২০১৬ কোপা আমেরিকার প্রতিচ্ছবি, যেখানে কিনা এই আর্জেন্টিনাকেই একইভাবে হারতে হয়েছিল। আর জয়ের মধ্যে দেখতে পেল সেই ক্ষুদে জাদুকর মেসির প্রতিচ্ছবি, যে কিনা প্রায় একাই লড়াই করে দলকে ফাইনালে তুললেন। দেশি বিদেশি প্রত্রিকায় জয়-রাফিদের স্বপ্ন ভঙ্গের ছবি প্রকাশ হয়।
এরই মধ্যে আরও ৪ বছর পেরিয়ে যায়। জয় রাফিদের জন্য বিশ্বের বড় বড় ক্লাব থেকে অফার আসতে থাকে। জয় ইন্টার মিলান, রার্য়ান মিউনিথের মতো ক্লাবকে টেক্কা দিয়ে স্প্যানিশ জায়েন্ট বার্সেলোনায় যোগ দেন।
আরিফ এখন খেলছেন ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলানে। তাকে এখন ক্লাব লিডেন্জ ইকার্ডির সাথে তুলনা করা হয়। রাফি এটাকিং মিড ফিল্ডার হিসেবে রিয়াল মাদ্রিদে কয়েকটি ভাল মৌসুম কাটিয়ে এসেছেন। আরিফ রাফি জুটিতে এখন লেগেছে ভ্যালিন্সিয়ার সর্বকালের সর্বশ্রষ্ঠ ডিফেন্ড ডিউোর তকমা। সুমন রয়েছেন এ. এস. রোমাতে। আনামুল এখন জাপানিজ ক্লাব টোকিও এফসির মূল গোলকি।
২০৭০ বিশ্বকাপের জন্য শক্তপোক্ত দল গড়পছপ বাংলাদেশ। এবার ইন্ডিয়া, চিন, জাপান, চিলিকে অতিক্রম করে তাদের অবস্থান ১২ তম র্যাংকিয়ে। বিশ্বকাপের কয়েক মাস আগেই দলে কোচ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ২০২৬ বিশ্বকাপ জয়ী ইংল্যন্ড টিমের সদস্য “জেসে লিন্গার্ড" কে।
প্রধান কোচিং স্টাফ হিসেবে আরও যোগ করা হয় একসময়ের ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার কৌতিনহোকে। নেদাল্যান্ড, ইতালির মতো টিমকে কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের। এদের কোচিংয়ে অফেন্স, মিড বা ডিফেন্ড সব মিলিয়ে শক্ত-পোক্ত এক দল গড়ে তুলতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। ৩২ বছর বয়সী জয়ের হাতে এবারও আর্মব্যান্ড।
প্রবল উত্তেজনায় ২০৭০ জার্মান বিশ্বকাপ শুরু হয়। প্রথম গ্রুপ ম্যাচে তেমন শক্তপোক্ত কোন দল না পরায় সহজেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে মাঠ ছাড়ে লাল-সবুজরা। বিপত্তি বাধে পরের পর্বে। বিশ্বকাপের সবচেয়ে দ্রতগতি সম্পন্ন দল নেদারল্যান্ডস এর সাথে ম্যাচ পরে বাংলাদেশের। এজেন আমানির গোলে প্রথমার্ধেই এগিয়ে যায় ডাচরা। বাংলাদেশের চোখে তখন আবারও স্বপ্ন ভাঙার হতাশা। তবে সোহান মিশুদের দুর্বোধ্যতা আর আরিফ - রাফি - জয়দের প্রতি আক্রমনে ২-১ এ জয় পায় বাংলাদেশ। কোয়াটার ফাইনালে দেখা হয় চিলির সাথে। সেই ম্যাচে তেমন কোন রোমাঞ্চ না থাকলেও। ইতালির সাথে হেরে বাদ যায় গত বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। তখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের অন্যতম অঘটনও এটিকে বলা হচ্ছিল। সেমিতে খেলা পড়ে সদ্য স্পেনকে হারিয়ে আসা ব্রাজিল। মাত্র ৩৬ মিনিটেই ব্রাজিলকে এগিয়ে দেন ইয়াঙ্গস্টার পাইলিদিনহো। ২য়ার্ধে সুযোগ বুঝে কোচ মিডফিল্ডার আফিফের বদলে দলে অভিষেক করান কুমিল্লা টাইগার্স এর হয়ে খেলা ১৯ বয়সী সেকেন্ড স্ট্রাইকার পজিশনে খেলা রুম্মন ইফানের। ১ম ম্যাচেই খেলতে নেমেই যথাক্রমে ৬৪, ৭১ ও ৮৯ মিনিটে তিন গোল করে বিশ্বকাপে অভিষেক ম্যাচে হ্যাট্রিকের রেকর্ড করেন ইফান। খেলার ধরণ ও পজিশনের কারণে তার তুলনা হতে থাকে একসময়ের ফরাসি লিজেন্ড গ্রিজম্যানের সাথে।
১৯ জুলাই, ২০৭০বিশ্বকাপ ফাইনাল
বাংলাদেশ সময় পৌনে ৬টায় শুরু হয় ম্যাচ। জার্মান বনাম বাংলাদেশ। প্রথম আর্ধ গোল শূন্য থাকায় পরও দ্বিতীয় আর্ধে গোলের দেখা নেই। অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় ম্যাচ। অতিরিক্ত সময়ের শেষ অংশে ১১৮ মিনিটে উইঙ্গার পুলিনের জোরালো পাসে গোল করে বসেন জু. মালজুকিজ। আবারও ক্ষোভে ক্রাধো ভেঙে পড়ে বাঙালি ফুটবল প্রেমিরা, কেনই শুধু তাদের সাথে এরকম অন্যায্যতা হয়। ফুটবলবিধাতা কী তাদের কপালে তাহলে এই রেখে দিয়েছিলেন? শেষ বারের মতো নিজেদের পরাজয় নিশ্চিত জেনেও দলকে শান্তনা দেয় দলনেতা জয়।
তবে চমকটা কিছুক্ষণ পর ঘটে সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা। চতুর্থ রেফারী জন ভম মেইন রেফারির সাথে কিছু একটা আলোচনা করতে মাঠে প্রবেশ করেন। তখন মেইন রেফরী এলেক্সিজ রোজেন মাঠ হতে ডিভিও এসিস্টেন্ট রেফরীর সহায়তা নেন। কিছুক্ষণ পর নতুন সংযোজনকৃত “সাইড লাইন সেন্সিবল" প্রযুক্তির সহায়তায় ধরা পড়ে পুলিনের সটের আগেই সাইড লাইন অতিক্রম করে বল। গোল বাতিল হয়। আবেগে দুফোটো আনন্দশ্রুো ফেলে বাংলার ফুটবল প্রেমিরা। পররবর্তীতে ম্যাচ গড়ায় ট্রাইব্রেকারে।
জার্মানির নেওয়া ২য় শটই দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেয় আনামুল। বাংলাদেশের পক্ষে সুমনের নেওয়া ৩য় শটটা যখন জার্মান গোলকিপার প্রায় থামিয়েই দিয়েছিল তখন যোন ক্ষাণিকক্ষণের জন্য বাঙালির হৃৎস্পন্দও থেমে গিয়েছিল। এবার আসে সেই অন্তিমক্ষণ বিশ্বকাপ আর বাংলাদেশের মধ্যে দেওয়াল মাত্র এক গোল। ইতিমধ্যে গোলটি হলে বাঙালি মসজিদ দরগায় কি দিবে তার মানতও করে ফেলেছে।
শেষ পর্যন্ত পারবে কি জয়?
বা পায়ের ছোট্ট এক পুশে জার্মান গোলরক্ষক যেদিকে ঝাপ দিলেন সেই দিকেই বল পাঠালেন জয়। না, এবার আর পুনরাবৃত্তি ঘটল না। জার্মান গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে বিশ্বকাপের দূত ঠিকই জালে প্রবেশ করল। বিশ্বকাপের ইতিহাসে তৈরি হল এক নতুন কাব্য।
চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ!!!
জার্সি খুলে শূন্যে ছুড়লেন জয়। পুরো স্টেডিয়াম দেখলো তার বুকে পিঠে বড় বড় করে লেখা "জয় বাংলা"। মাঠের মধ্যে জয় বাংলা স্লোগানে ভিক্টোরি ল্যাপ দিলো সবাই। পুরো বিশ্ব একসাথে দাঁড়িয়ে সম্মান দেখালো বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে। পুরো বাংলাদেশ যেন স্পিচলেস হয়ে গেছে। সবাই যাকে সামনে পাচ্ছে তাকেই জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।
গোল ডট কম জয়কে বাংলার মেসি, বাংলার রোনালদো, বাংলার পেলে ম্যারাডোনা এসব ট্যাগ দিতে লাগলো। এসব ট্যাগকে রিজেক্ট করে দিয়ে বাংলাদেশের এক পত্রিকা নিউজ করে দিলো, আমাদের জয় বাংলার মেসি, রোনালদো, পেলে, ম্যারাডোনা কেউ না। জয় আমাদের ফুটবলের মাশরাফি।
পুরো বিশ্ব আবারও অবাক হয়ে জানলো বাংলাদেশের এক সাহসী ক্রিকেটের নেতা মাশরাফির কথা। বাংলাদেশ টিমকে নিজে সামনে থেকে দাঁড়িয়ে লিড দিয়ে ২০১৯ সালের ক্রিকেট ওয়ার্ল্ডকাপ জিতিয়েছিলেন তিনি।
বাংলাদেশিরা মাশরাফিকে মনে রেখেছেন জয়ের মাধ্যমে।
হ্যাটস অফ বাংলাদেশ হ্যাশট্যাগে ভাসছে সোশাল মিডিয়া।
#২০৭৪ সালের বিশ্বকাপ
এবার ফেভারিটের তালিকায় নাম বাংলাদেশের। স্বাধীনতার ১০০ বছর অন্যরকম ভাবে কেটেছে বাংলাদেশের। গোল ডট কমে নিউজ হল, নিজের পারসোনাল ইয়ট বিক্রি করে দিয়ে দশ
কিলোমিটার লম্বা দেয়াল বানিয়ে লাল সবুজ রঙে
সাজিয়েছেন
জনৈক আমেরিকান...
©ArmanAlif ©SaSagar ©লিম আব্দুল্লাহ ©ShahriarImranImu ©SShahriar
প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ খেলছে বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপের হোস্ট চায়না। এশিয়ান রিজিওনে চায়না এখন অনেক স্ট্রং টিম। নতুন করে বড় দলের খাতায় নাম লিখিয়েছে ইন্ডিয়া আর
বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কারেন্ট র্যাংকিং এখন ২৫, ইন্ডিয়ার ২৩।
দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপ খেলছে ইন্ডিয়া।
এশিয়ান ফুটবল এখন সারাবিশ্বে বেশ জনপ্রিয়। এএফসি (এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন) চ্যাম্পিয়ন্স লীগ এখন হাইভোল্টেজ লীগ। গত সিজনে রানার্সআপ হয়েছে বাংলাদেশের "ফুটবল ক্লাব ঢাকা"। চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জাপানের ক্লাব "টোকিও ভার্ডি"।
সাফে এখন বাংলাদেশ আর ইন্ডিয়া ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কাপ নিচ্ছে। বাংলাদেশের ঝুলিতে এখন ৭ টি সাফ শিরোপা। এস এ গেমসে গোল্ড আছে আটটা। অবশ্য লাস্ট অলিম্পিকে বাংলাদেশ বলার মত তেমন কিছু করতে পারে নি। চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ব্রাজিল।
চাইনিজ লীগ এখন লা লীগার পর বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা লীগ। ইংলিশ লীগ ঐতিহ্য হারিয়েছে প্রায় এক যুগ হল। যদিও রেংকিয়ে ইংল্যান্ড এখন অনেক শক্তিশালী একটি দল। তাদের ঝুলিতে এখন তিন তিনটি বিশ্বকাপ। নিজেদের স্বর্ণযুগ অনেক আগেই কাটিয়ে আসা ব্রাজিলের বিশ্বকাপ সংখ্যা এখন ৬টি। পেলে, রিভালদো, রোনালদো, রোনালদিনহোদের সোনালি সময়গুলো এখন শুধুই অতীত। লাস্ট ৩টি বিশ্বকাপে নিজেদের সেরা স্কোয়াড় নিয়েও তাদের হারতে হয় ইটালি, ইংল্যন্ড আর আর্জেন্টিনার কাছে। লাস্ট ইয়ারে ব্যালন ডিঅর জেতা ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড উইলিয়ান জুনিয়র খেলছেন বেইজিং স্পোর্টস এ। পাশাপাশি ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশের প্রিমিয়ার লীগও এখন বেশ মর্যাদার লীগ এশিয়াতে।
আর্জেন্টিনা টিমে বড় কোন স্টার নেই এখন।
তবে তাদের বেশ কজন উঠতি স্টার আছে। আর্জেন্টাইন লীগ থেকে ১৯ বছর বয়সী ফাবিয়ানকে উড়িয়ে এনেছে ফুটবল ক্লাব ঢাকা। তার গায়ে তুলে দেয়া হয়েছে ১০ নম্বর জার্সি। তাকে এই জেনারেশনের মেসি বলে ডাকা হচ্ছে। তবে ঢাকার খেলায় স্পটলাইট ফাবিয়ানের চেয়ে বেশি থাকে অন্য এক প্লেয়ারের উপর। তার নাম জয়। বাংলাদেশের ছেলে। তার গায়ে ১১ নাম্বার জার্সি। বাংলাদেশ ন্যাশনাল টিমে আলো ছড়াচ্ছেন ২০ বছর বয়সী ৯ নম্বর জার্সি পরা স্ট্রাইকার আরিফ। ৭ নম্বর জার্সি পরা উইংগার রাফি বা পায়ের শটে বিশ্বসেরাদের কাছাকাছি। মিডফিল্ডে সুমন আছেন দলের ভরসা। একাই বল টেনে নিয়ে চোখ ধাঁধানো গোল দিতে পারেন। বাংলাদেশের ডিফেন্স এই মূহুর্তে এশিয়ার সেরা ডিফেন্স। যদিও ডিফেন্ডার মিশু এবং সোহান স্প্যানিশ লীগে খেলছেন। এশিয়ান কম্বিনেশনে এডজাস্ট হতে সময় লাগার কথা। তারপরও তারা কনফিডেন্ট। গোল কিপার আনামুল খেলছেন চাইনিজ লীগে। এশিয়ার অন্যতম সেরা সে। বিশ্বকাপের আগে ১০ নম্বর জার্সি আয়োজন করে তুলে দেয়া হয়েছে জয়ের গায়ে। পরিয়ে দেয়া হয়েছে ক্যাপ্টেন্স ব্যান্ড। ২৮ বছর বয়সী জয় ওয়ান ম্যান আর্মির মত বাংলাদেশকে একা টেনে নিয়ে গেছেন বিশ্বকাপ পর্যন্ত। ২০ থেকে ২৩ বছর পর্যন্ত জয় চাইনিজ লীগে খেলেছেন। তারপর সিভিয়ার ইঞ্জুরিতে পড়ে মাঠের বাইরে ছিলেন এক বছর। ফিরে আসতে আরও এক বছর। সবাই ভেবেছিলেন তিনি হয়তআর কামব্যাক করবেন না। পুরো দেশকে কাঁদিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে মাঠ ছাড়তে হয়েছিলো তাকে।
২৫ বছর বয়সে জয় দলে ফিরলেন। তার ফিরে আসাতেই যেন উজ্জীবিত হল বাংলাদেশ। ২০৬৭ সালে প্রথমবারের মত এএফসি এশিয়ান কাপের ফাইনাল খেললো বাংলাদেশ। ৭ বারের চ্যাম্পিয়ন জাপানকে হারিয়ে এখন তারা
এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন।
পুরো বাংলাদেশে যেন একটাই নাম তারপর থেকে। জয়!
জয়! জয়!
তার ইঞ্জুরির ভাগ্য খুব খারাপ। আবারও ইঞ্জুরিতে পড়লেন। কামব্যাকও করলেন। তবে চাইনিজ লীগে আর ফের হল না। থেকে গেলেন ঢাকায়। ঢাকার হয়ে দুই মৌসুম ৮০ টি গোল
করেছেন। তারপর ওয়ার্ল্ডকাপ কোয়ালিফাইং রাউন্ডে আগুন ঝড়ানো ফুটবল খেলে ২৮ বছর বয়সে প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে এসেছেন বাংলাদেশকে নিয়ে।
২০৬৪ বিশ্বকাপের পর্দা উঠলো। উদ্বোধনি ম্যাচে
মুখোমুখি চায়না আর জার্মানি। ১-০ গোলে জার্মানিকে হারিয়ে দিল চায়না। সবার চোখে মুখে বিস্ময়ের ছাপ। হয়তো নতুন কিছু হতে চলেছে।
বিশ্বকাপের দ্বিতীয় দিন। বি গ্রুপের প্রথম ম্যাচে
বাংলাদেশ স্পেনের মুখোমুখি। স্পেনের টিকিটাকার সাথে বাংলাদেশের ফুটবলের নিউলি ইনট্রোডিউজড দেশি স্টাইল। স্পেনের সাথে ১-১ গোলে ড্র করলো বাংলাদেশ। পরের দুটো ম্যাচে পেরু এবং নাইজেরিয়াকে হারিয়ে দিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ বাংলাদেশ। স্পেন আরও বড় ব্যবধানে জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন।
প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ খেলতে এসেই দ্বিতীয়
রাউন্ডে বাংলাদেশ। পুরো বিশ্ব একবার ভ্রু কুঁচকে
তাকালো এই নামটার দিকে। স্টেডিয়ামে উড়া বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকার দিকেও।
ফুটবলের সবচেয়ে প্রভাবশালী সাইট গোল ডট কম বাংলাদেশ নিয়ে বিশাল বড় ফিচার করলো।
দ্বিতীয় রাউন্ডে বাংলাদেশ ইন্ডিয়াকে হারালো।
কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ইতালি। ১-০ গোলে ইতালিকে হারিয়ে লিটারেলি পুরো বিশ্বকে শকড করে দিলো বাংলাদেশ। একমাত্র গোলটা এলো জয়ের পা থেকে।
এদিকে গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব ট্রেন্ডিং এ নাম্বার ওয়ানে চলে এলো বাংলাদেশের নাম। বাংলাদেশকে নিয়ে স্টাডি
করছে সবাই। বাংলাদেশবাসী দেখছে পাওয়ার অফ ফুটবল। একটা খেলা তাদের দেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ব্যাপারে স্টাডি করতে গিয়ে সব মানুষেরা শুধু অবাক হচ্ছে। হাইলি পপুলেটেড এমন একটা দেশে মানুষ কীভাবে সার্ভাইভ করছে এটা ভেবে তারা যেন শিউরে উঠছে। ওভার ক্রাউডেড সিটি ঢাকা বিশ্বের বসবাসেরঅযোগ্য শহরের একটি অথচ সেই ঢাকা থেকেই উঠেএসেছে জয়ের মত প্লেয়ার।
১৯৭১ এ এই জাতি যুদ্ধ করে নিজেদের দেশ ছিনিয়ে এনেছে। ১৯৫২ সালে নিজের ভাষার জন্য যুদ্ধ করেছে।এশিয়ান ফুটবলে দে ওয়্যার নাথিং। বাট একটা সময় তাদের আবাহনী- মোহামেডানের টান টান উত্তেজনাময় ফুটবল লীগ ছিলো। হাউ ফানি!!!
গোল ডট কম একটা ফিল্ডওয়ার্ক করালো এক রিপোর্টারকে দিয়ে বাংলাদেশে। তারপর একটা প্রতিবেদন ছাপা হল এভাবে,
"মূলত ২০১৮ বিশ্বকাপের সাথে বাংলাদেশের
এংগেজমেন্ট ছিল প্রচুর। ফর্মে থাকা রোনালদো, মেসি, নেইমারদের দেখে সে দেশের ছেলেরা উজ্জীবিত হল নতুন করে। ফুটবল সে দেশে আগে থেকেই খুব জনপ্রিয় খেলা ছিলো। তারপর সেখানে কিছু ফুটবল একাডেমি গড়ে উঠলো। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে ঢেলে
সাজিয়ে কিছু ইউসফুল পারসনকে বসানো হল। দেখতে দেখতে তাদের খেলার স্ট্যান্ডার্ড বেড়ে গেলে। তবে বড় আসরে ঠিকমত ক্লিক করছিলো না সে দলটা। এর মধ্যেই এশিয়াতে ফুটবলের প্রচুর প্রসার ঘটলো। বাংলাদেশের এখন
যে টিমটা আছে সেই টিমটা আসার পর তাদের ফুটবল পুরোপুরি বদলে গেল। স্পেশালি দ্যাট বয়, জয়। ওয়ান ম্যান আর্মির মত দেশের ফুটবলের হাল ধরে আছেন ১০ বছর ধরে।"
একসময় বাংলাদেশের মানুষজন ব্রাজিল আর্জেন্টিনা নিয়ে কতপাগল ছিলো সেসব নিয়ে হাসাহাসি হল পুরো বিশ্বপ্রচুর। জমি বেচে পাঁচ কিলোমিটার লম্বা জার্মানির পতাকা বানানো চাচার সবকিছু আর্কাইভ করা হল।
২০৬৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ব্রাজিলের মুখোমুখি বাংলাদেশ। এর আগের তিন দেখায় কখনো জিততে পারেনি বাংলাদেশ।
৯০ মিনিট গোলশূন্য খেলায়। অতিরিক্ত সময়ের ৭ মিনিটের মাথায় জয়ের বাড়ানো পাস থেকে গোল করলেন রাফি। থেমে গেল ব্রাজিল শিবির।
বাংলাদেশ! বাংলাদেশ! বাংলাদেশ!
স্টেডিয়ামে যেন একটাই শব্দ। চায়না থেকে সে শব্দ যেন ভেসে আসছে কর্ণফুলীর তীরে।
প্রথমবারের মত খেলতে এসেই ফাইনালে উঠে গেল বাংলাদেশ। ফাইনালে খেলবে তাদের দেশের মানুষদের সবচেয়ে প্রিয় দল আর্জেন্টিনার বিপক্ষে।
বেইজিং ন্যাশনাল স্টেডিয়ামের প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ লাল সবুজ রং এ নিজেদের রাঙিয়ে খেলা দেখতে এসেছে। যে বাংলাদেশে একসময় প্রতিটা গাছে আর্জেন্টিনার পতাকা লাগানো থাকতো তারাই আজ প্রতিপক্ষ। বাংলাদেশের মানুষ টেনশনে সারাদিন না খেয়ে আছে। খেলা শুরু হল। বিশ মিনিটের মাথায় মারাত্মক একট্যাকলে মাঠ ছাড়লেন আগের ম্যাচের স্কোরার রাফি। বাংলাদেশ শিবিরে দুশ্চিন্তা। ক্যাপ্টেন জয় সবাইকে হাত ইশারা দিয়ে বোঝালেন, টেনশন নিস না, আমি আছি। প্রথম হাফ গোলশূন্য থাকার পর সেকেন্ড হাফও প্রায়শেষের দিকে। অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিটে এসে মিডফিল্ড থেকে একা বল টেনে নিয়ে গিয়ে গোল করলেন আর্জেন্টিনার পাবলো পেরেজ। সাথে সাথেই হুইসেল বাজলো। খেলা
শেষ।
আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন!!!
আবারো স্বপ্ন ভঙ্গের স্বাদ পোলো ৩৮ কোটি মানুষ। যদিও এই বিশ্বকাপ হতে তেমন কিছু হারাবার ছিল না জয়-রাফিদের। তবুও যেন আজ সারা বিশ্ব ফুটবলপ্রমীদের বুকে দহনের সুর। তাদের চোখে ভেসে উঠল ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ অথবা ২০১৫/২০১৬ কোপা আমেরিকার প্রতিচ্ছবি, যেখানে কিনা এই আর্জেন্টিনাকেই একইভাবে হারতে হয়েছিল। আর জয়ের মধ্যে দেখতে পেল সেই ক্ষুদে জাদুকর মেসির প্রতিচ্ছবি, যে কিনা প্রায় একাই লড়াই করে দলকে ফাইনালে তুললেন। দেশি বিদেশি প্রত্রিকায় জয়-রাফিদের স্বপ্ন ভঙ্গের ছবি প্রকাশ হয়।
এরই মধ্যে আরও ৪ বছর পেরিয়ে যায়। জয় রাফিদের জন্য বিশ্বের বড় বড় ক্লাব থেকে অফার আসতে থাকে। জয় ইন্টার মিলান, রার্য়ান মিউনিথের মতো ক্লাবকে টেক্কা দিয়ে স্প্যানিশ জায়েন্ট বার্সেলোনায় যোগ দেন।
আরিফ এখন খেলছেন ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলানে। তাকে এখন ক্লাব লিডেন্জ ইকার্ডির সাথে তুলনা করা হয়। রাফি এটাকিং মিড ফিল্ডার হিসেবে রিয়াল মাদ্রিদে কয়েকটি ভাল মৌসুম কাটিয়ে এসেছেন। আরিফ রাফি জুটিতে এখন লেগেছে ভ্যালিন্সিয়ার সর্বকালের সর্বশ্রষ্ঠ ডিফেন্ড ডিউোর তকমা। সুমন রয়েছেন এ. এস. রোমাতে। আনামুল এখন জাপানিজ ক্লাব টোকিও এফসির মূল গোলকি।
২০৭০ বিশ্বকাপের জন্য শক্তপোক্ত দল গড়পছপ বাংলাদেশ। এবার ইন্ডিয়া, চিন, জাপান, চিলিকে অতিক্রম করে তাদের অবস্থান ১২ তম র্যাংকিয়ে। বিশ্বকাপের কয়েক মাস আগেই দলে কোচ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ২০২৬ বিশ্বকাপ জয়ী ইংল্যন্ড টিমের সদস্য “জেসে লিন্গার্ড" কে।
প্রধান কোচিং স্টাফ হিসেবে আরও যোগ করা হয় একসময়ের ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার কৌতিনহোকে। নেদাল্যান্ড, ইতালির মতো টিমকে কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের। এদের কোচিংয়ে অফেন্স, মিড বা ডিফেন্ড সব মিলিয়ে শক্ত-পোক্ত এক দল গড়ে তুলতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। ৩২ বছর বয়সী জয়ের হাতে এবারও আর্মব্যান্ড।
প্রবল উত্তেজনায় ২০৭০ জার্মান বিশ্বকাপ শুরু হয়। প্রথম গ্রুপ ম্যাচে তেমন শক্তপোক্ত কোন দল না পরায় সহজেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে মাঠ ছাড়ে লাল-সবুজরা। বিপত্তি বাধে পরের পর্বে। বিশ্বকাপের সবচেয়ে দ্রতগতি সম্পন্ন দল নেদারল্যান্ডস এর সাথে ম্যাচ পরে বাংলাদেশের। এজেন আমানির গোলে প্রথমার্ধেই এগিয়ে যায় ডাচরা। বাংলাদেশের চোখে তখন আবারও স্বপ্ন ভাঙার হতাশা। তবে সোহান মিশুদের দুর্বোধ্যতা আর আরিফ - রাফি - জয়দের প্রতি আক্রমনে ২-১ এ জয় পায় বাংলাদেশ। কোয়াটার ফাইনালে দেখা হয় চিলির সাথে। সেই ম্যাচে তেমন কোন রোমাঞ্চ না থাকলেও। ইতালির সাথে হেরে বাদ যায় গত বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। তখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের অন্যতম অঘটনও এটিকে বলা হচ্ছিল। সেমিতে খেলা পড়ে সদ্য স্পেনকে হারিয়ে আসা ব্রাজিল। মাত্র ৩৬ মিনিটেই ব্রাজিলকে এগিয়ে দেন ইয়াঙ্গস্টার পাইলিদিনহো। ২য়ার্ধে সুযোগ বুঝে কোচ মিডফিল্ডার আফিফের বদলে দলে অভিষেক করান কুমিল্লা টাইগার্স এর হয়ে খেলা ১৯ বয়সী সেকেন্ড স্ট্রাইকার পজিশনে খেলা রুম্মন ইফানের। ১ম ম্যাচেই খেলতে নেমেই যথাক্রমে ৬৪, ৭১ ও ৮৯ মিনিটে তিন গোল করে বিশ্বকাপে অভিষেক ম্যাচে হ্যাট্রিকের রেকর্ড করেন ইফান। খেলার ধরণ ও পজিশনের কারণে তার তুলনা হতে থাকে একসময়ের ফরাসি লিজেন্ড গ্রিজম্যানের সাথে।
১৯ জুলাই, ২০৭০বিশ্বকাপ ফাইনাল
বাংলাদেশ সময় পৌনে ৬টায় শুরু হয় ম্যাচ। জার্মান বনাম বাংলাদেশ। প্রথম আর্ধ গোল শূন্য থাকায় পরও দ্বিতীয় আর্ধে গোলের দেখা নেই। অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় ম্যাচ। অতিরিক্ত সময়ের শেষ অংশে ১১৮ মিনিটে উইঙ্গার পুলিনের জোরালো পাসে গোল করে বসেন জু. মালজুকিজ। আবারও ক্ষোভে ক্রাধো ভেঙে পড়ে বাঙালি ফুটবল প্রেমিরা, কেনই শুধু তাদের সাথে এরকম অন্যায্যতা হয়। ফুটবলবিধাতা কী তাদের কপালে তাহলে এই রেখে দিয়েছিলেন? শেষ বারের মতো নিজেদের পরাজয় নিশ্চিত জেনেও দলকে শান্তনা দেয় দলনেতা জয়।
তবে চমকটা কিছুক্ষণ পর ঘটে সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা। চতুর্থ রেফারী জন ভম মেইন রেফারির সাথে কিছু একটা আলোচনা করতে মাঠে প্রবেশ করেন। তখন মেইন রেফরী এলেক্সিজ রোজেন মাঠ হতে ডিভিও এসিস্টেন্ট রেফরীর সহায়তা নেন। কিছুক্ষণ পর নতুন সংযোজনকৃত “সাইড লাইন সেন্সিবল" প্রযুক্তির সহায়তায় ধরা পড়ে পুলিনের সটের আগেই সাইড লাইন অতিক্রম করে বল। গোল বাতিল হয়। আবেগে দুফোটো আনন্দশ্রুো ফেলে বাংলার ফুটবল প্রেমিরা। পররবর্তীতে ম্যাচ গড়ায় ট্রাইব্রেকারে।
জার্মানির নেওয়া ২য় শটই দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেয় আনামুল। বাংলাদেশের পক্ষে সুমনের নেওয়া ৩য় শটটা যখন জার্মান গোলকিপার প্রায় থামিয়েই দিয়েছিল তখন যোন ক্ষাণিকক্ষণের জন্য বাঙালির হৃৎস্পন্দও থেমে গিয়েছিল। এবার আসে সেই অন্তিমক্ষণ বিশ্বকাপ আর বাংলাদেশের মধ্যে দেওয়াল মাত্র এক গোল। ইতিমধ্যে গোলটি হলে বাঙালি মসজিদ দরগায় কি দিবে তার মানতও করে ফেলেছে।
শেষ পর্যন্ত পারবে কি জয়?
বা পায়ের ছোট্ট এক পুশে জার্মান গোলরক্ষক যেদিকে ঝাপ দিলেন সেই দিকেই বল পাঠালেন জয়। না, এবার আর পুনরাবৃত্তি ঘটল না। জার্মান গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে বিশ্বকাপের দূত ঠিকই জালে প্রবেশ করল। বিশ্বকাপের ইতিহাসে তৈরি হল এক নতুন কাব্য।
চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ!!!
জার্সি খুলে শূন্যে ছুড়লেন জয়। পুরো স্টেডিয়াম দেখলো তার বুকে পিঠে বড় বড় করে লেখা "জয় বাংলা"। মাঠের মধ্যে জয় বাংলা স্লোগানে ভিক্টোরি ল্যাপ দিলো সবাই। পুরো বিশ্ব একসাথে দাঁড়িয়ে সম্মান দেখালো বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে। পুরো বাংলাদেশ যেন স্পিচলেস হয়ে গেছে। সবাই যাকে সামনে পাচ্ছে তাকেই জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।
গোল ডট কম জয়কে বাংলার মেসি, বাংলার রোনালদো, বাংলার পেলে ম্যারাডোনা এসব ট্যাগ দিতে লাগলো। এসব ট্যাগকে রিজেক্ট করে দিয়ে বাংলাদেশের এক পত্রিকা নিউজ করে দিলো, আমাদের জয় বাংলার মেসি, রোনালদো, পেলে, ম্যারাডোনা কেউ না। জয় আমাদের ফুটবলের মাশরাফি।
পুরো বিশ্ব আবারও অবাক হয়ে জানলো বাংলাদেশের এক সাহসী ক্রিকেটের নেতা মাশরাফির কথা। বাংলাদেশ টিমকে নিজে সামনে থেকে দাঁড়িয়ে লিড দিয়ে ২০১৯ সালের ক্রিকেট ওয়ার্ল্ডকাপ জিতিয়েছিলেন তিনি।
বাংলাদেশিরা মাশরাফিকে মনে রেখেছেন জয়ের মাধ্যমে।
হ্যাটস অফ বাংলাদেশ হ্যাশট্যাগে ভাসছে সোশাল মিডিয়া।
#২০৭৪ সালের বিশ্বকাপ
এবার ফেভারিটের তালিকায় নাম বাংলাদেশের। স্বাধীনতার ১০০ বছর অন্যরকম ভাবে কেটেছে বাংলাদেশের। গোল ডট কমে নিউজ হল, নিজের পারসোনাল ইয়ট বিক্রি করে দিয়ে দশ
কিলোমিটার লম্বা দেয়াল বানিয়ে লাল সবুজ রঙে
সাজিয়েছেন
জনৈক আমেরিকান...
©ArmanAlif ©SaSagar ©লিম আব্দুল্লাহ ©ShahriarImranImu ©SShahriar
Comments
Post a Comment