রম্যগল্প: "ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট-২"


বেশ কিছুদিন হবে হয়তো! বরাবরের মতো আজও সন্ধ্যায় পড়তে বসেছি। কিন্তু পড়া কি আর হয়? পাশে বসে আছে আমার গালফ্রেন্ড - মানে আমার একমাত্র মোবাইল..! বাবা বারবার আমার রুমে টহল দিয়ে যাচ্ছেন আর আমিও সুযোগ মতো এফবি স্ক্রোলিং করছি। কিন্তু লাইক দিচ্ছি না কোন পোষ্টে। ঢুকছি, কমেন্ট পড়ছি, বেরিয়ে আসছি।

ভালোই চলছিল সময়টা। যদিও খুব একটা ভালো বলা যাবে না, সিঙ্গেল ব্যাচেলরদের যা হয় আরকি! সাতদিন ফেবুতে না এলেও খোঁজ নেওয়ার কেউ নেই। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। এগুলো এখন সয়ে গেছে।
কোন পোষ্টে আক্রমণাত্মক কমেন্ট করে ঘেটে "ঘ" করে দেওয়ার অভ্যাস আগে থেকেই আছে। সেই উদ্দেশ্যেই আবারও একটা পেইজের পোষ্টে দেখলাম। পোষ্টটা ছিল আবার খানিকটা রোমান্টিক টাইপের তবে লজিকটা আমার পছন্দ হয়নি। এমনেই সিঙ্গেল তাই রোমান্টিক পোষ্ট দেখে গা জ্বলারই কথা। অনেক কাপলই দেখলাম একে অপরকে মেনসন করে নানা রোমান্টিক কথাবার্তা লিখছে। এটা দেখে গা আরও তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো। কথায় আছে; যখন পাওয়া যায়না, তখন হিংসেটা হয় বেশি।

প্রায় সবগুলো কমেন্টই মনোযোগের সাথে পড়া শেষ। কি ধাচের কমেন্ট করে পোষ্টের বারোটা বাজানো যায়, তাও ভেবে ফেলেছি। তবে হঠাৎ একটা কমেন্ট পড়ে চোখ আটকে গেল। ঠিক যা যা বলতে অর্থাৎ লিখতে চেয়েছি, তা যেন কেউ আগেই লিখে ফেলেছে। অনেকটা ভূত দেখার মতো অবস্থা। শুধু যে আমার লেখাগুলো লিখেছে তাই নয় বরং একদম হুবুহু যাকে বলে টু দি পয়েন্ট!!

যাক বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলাম। বেশ লম্বা-চওড়া লেখা। আমিও লিখলে বড় করেই লিখতাম হয়তো। বারংবার কমেন্টটা পড়ছিলাম আর প্রতিবার আগের চেয়েও বেশি বিস্মিত হচ্ছিলাম। এইও কি সম্ভব? তবে নিজের চোখকে তো আর অবিশ্বাস করতে পারছিলাম না। লেখাটার প্রতি কেমন জানি মায়া জন্মে গেল। নামের আর পাশে ছোট করে শো করা প্রোফাইল পিক দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না প্রোফাইলটা কোন উঠতি বয়সী তরুণীর; হয়তো সমবয়সীই হবে! ছোট করে শো করা প্রোফাইল পিক হতেই আন্দাজ প্রোফাইলে সম্ভবত শাড়ি পরা ছবি দেওয়া, সোনালি পাড়ে লাল শাড়ি! ভালোই লাগছিল দেখতে হয়তো। দেখতে দেখতে  হঠাৎ কল্পনায় চলে গেলাম। এক নিমিষেই বহুদূর।  ভাবলাম, দো-তোলা ছাদের বারান্দা, দু'জন একই চিন্তাধারার মানুষ পাশাপাশি বসে আছে। পাশে টি-টেবিলে রাখা দু'কাপ কফি আর হাতে মোবাইল। নাহয়, দু'জন একসাথে একই পোষ্টে একই কমেন্ট করলাম!! মন্দ হয়না।

ভাবলাম এবার প্রোফাইলো ঢুকে রিকুয়েস্টটা দিয়ে দেই? সেকি একসেপ্ট করবে? যদি না করে? নাকি একটা মেসেজ দিব? এভাবে হুট করে অপরিচিত কাউকে মেসেজ দেওয়া কী ঠিক হবে? দিলেও কি সে দেখবে? এভাবে সাত-পাঁচ ভেবে ঠিক করলাম; যা হবার হবে, এবার প্রোফাইলে ঢুকে রিকুয়েস্টটা দিয়েই দিবো। যেই কথা সেই কাজ, করলাম ক্লিক ললনার প্রোফাইলে।

কিন্তু একি প্রোফাইল শো করার বদলে "Your data bundle is over" মেসেজ শো করলো। মনে মনে সিম অপারেটরকে কিছুক্ষণ  গালমন্দ  করে গুষ্টি উদ্ধার করলাম। আশেপাশে কারও ফোন না পেয়ে পাশের রুমে বোনের ফোনের উপরই হামলা করলাম। যেহেতু আমি পোষ্টটাতে লাইক কমেন্ট কিছুই করেছিলাম না, তাই এক্টিভিটি লগে সার্চ করেও তেমন কোন লাভ হলো না। সেইসাথে কল্পনায় এতটাই ডুবে গিয়েছিলাম যে, আইডির নামটাও ঠিক করে মনে পড়ছে না। একটা সুন্দর স্বপ্নের অঙ্কুরে রোধন। যদিও মায়াটা কমেন্টটা না কমেন্টকারীর প্রতি জন্মেছিল আমি এখনও নিশ্চিত নই, তবে সেই বহু আকাঙ্খিত "Friend Request" তাকে আর কখনই পাঠানো হয়নি!


©এস.এ. সাগর ।

Comments

Popular posts from this blog

জেনে নিন ইমুজি ও এর ব্যবহার!! -_-